আমরা সবাই ইউরোপের স্বপ্ন দেখি, তাই না? আইফেল টাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে সেলফি তোলা, ইতালির ভেনিসে গন্ডোলায় চড়া, বা স্পেনের ঐতিহাসিক দুর্গগুলো ঘুরে দেখা—আহা, ভাবতেই মনটা কেমন যেন আনচান করে ওঠে! কিন্তু অনেকেই ভাবেন, ইউরোপ ভ্রমণ মানেই অনেক টাকা খরচ। এই ধারণাটা কিন্তু সবসময় ঠিক নয়! আমার অভিজ্ঞতা আর কিছু বুদ্ধি খাটালে কম বাজেটেই আপনি ইউরোপের নানান সুন্দর দেশে ঘুরে আসতে পারবেন, এমনকি বাংলাদেশ থেকেও। চলুন, আজকের ব্লগে আমি আপনাকে এমন কিছু দারুণ টিপস আর দেশের খোঁজ দেব, যা আপনার ইউরোপ ভ্রমণের স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করতে সাহায্য করবে। বিশ্বাস করুন, এই ভ্রমণ আপনার ওয়ালেটে খুব একটা চাপ ফেলবে না!
কম খরচে ইউরোপের কোন দেশে যাওয়া যায়?
আপনার মনে হয়তো প্রথমেই এই প্রশ্নটা আসছে – কম টাকায় ইউরোপের কোথায় যাওয়া যায়? পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো যেমন ফ্রান্স, জার্মানি বা সুইজারল্যান্ড নিঃসন্দেহে অসাধারণ, তবে বাজেটের কথা ভাবলে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোই সেরা বাজি। এই দেশগুলো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর, ঐতিহাসিক গুরুত্বও কম নয়, কিন্তু খরচ তুলনামূলকভাবে অনেকটাই কম। তাহলে চলুন, জেনে নিই কোন দেশগুলো আপনার সাশ্রয়ী ইউরোপ ভ্রমণের তালিকায় সবার উপরে থাকা উচিত:
- পোল্যান্ড: ছবির মতো সুন্দর শহর ক্রাকো এবং ঐতিহাসিক ওয়ারশ আপনার মন জয় করে নেবে। এখানকার জীবনযাত্রার খরচও বেশ কম।
- হাঙ্গেরি: বুদাপেস্টের মতো ঝলমলে শহর, যেখানে স্থাপত্য আর সংস্কৃতির এক দারুণ মিশেল দেখতে পাবেন। এখানকার থার্মাল বাথগুলো খুবই বিখ্যাত আর সস্তাও বটে!
- রোমানিয়া: ড্রাকুলার দেশ হিসেবে পরিচিত হলেও, এখানকার প্রাকৃতিক দৃশ্য আর মধ্যযুগীয় দুর্গগুলো আপনাকে মুগ্ধ করবে।
- বুলগেরিয়া: কৃষ্ণ সাগরের তীরবর্তী এই দেশটি তার পাহাড়, সৈকত আর ঐতিহাসিক স্থানগুলির জন্য পরিচিত। খাবার থেকে শুরু করে থাকা-খাওয়ার খরচ বেশ কম।
- পর্তুগাল: পশ্চিম ইউরোপের হলেও, পর্তুগাল তার প্রতিবেশী দেশগুলির তুলনায় অনেক বেশি সাশ্রয়ী। লিসবন আর পোর্টোর মতো শহরগুলো আপনার মন কেড়ে নেবে।
- লিথুয়ানিয়া, লাটভিয়া, এস্তোনিয়া (বাল্টিক দেশ): এই তিনটি বাল্টিক দেশ তাদের অনন্য সংস্কৃতি, সুন্দর স্থাপত্য এবং বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশের জন্য পরিচিত। এখানে খরচ বেশ কম।
- স্লোভাকিয়া: হাইকিং প্রেমীদের জন্য এক অসাধারণ জায়গা, এখানকার পর্বতমালা আর দুর্গগুলো নজরকাড়া।
- মাল্টা: ভূমধ্যসাগরের বুকে এই ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্রটি তার সৈকত, প্রাচীন মন্দির আর ক্রিস্টাল ক্লিয়ার পানির জন্য বিখ্যাত।
- ক্রোয়েশিয়া: অ্যাড্রিয়াটিক সাগরের তীরে অবস্থিত এই দেশটি তার অসাধারণ উপকূলরেখা আর ঐতিহাসিক শহরগুলোর জন্য জনপ্রিয়। গেম অফ থ্রোনস ভক্তদের জন্য এটি একটি স্বপ্নপুরী!
- আলবেনিয়া: ইউরোপের লুকানো রত্নগুলির মধ্যে এটি অন্যতম। এখানকার সমুদ্র সৈকত এবং পাহাড়গুলো আপনার মন কেড়ে নেবে, আর খরচও অত্যন্ত কম।
বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ যেতে কত টাকা লাগে?
আপনি যদি বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ যাওয়ার কথা ভাবছেন, তাহলে একটা মোটামুটি বাজেট ধারণা থাকা জরুরি। ভিসার ধরন, আপনি কোন দেশে যাবেন এবং আপনি কোন এজেন্সির মাধ্যমে যাচ্ছেন, তার উপর নির্ভর করে খরচ কম-বেশি হতে পারে। তবে একটা সাধারণ ধারণা দিতে গেলে, বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ যেতে সাধারণত ৩ লক্ষ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে।
ভিসার ধরন অনুযায়ী খরচের একটি চিত্র:
| ভিসার ধরন | আনুমানিক খরচ (টাকা) |
| স্টুডেন্ট ভিসা | ৩ – ১০ লক্ষ |
| টুরিস্ট ভিসা | ৩ – ৫ লক্ষ |
| ওয়ার্ক পারমিট ভিসা | ৫ – ১৫ লক্ষ |
এই খরচগুলো বিমান টিকেট, ভিসা প্রসেসিং ফি, ট্রাভেল ইনস্যুরেন্স, থাকার খরচ এবং প্রথম কিছু দিনের আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে ধরা হয়েছে।
ইউরোপ শেনজেন ভিসার দাম কত?
ইউরোপের ২৭টি দেশে ভ্রমণ করার জন্য শেনজেন ভিসা হলো আপনার গোল্ডেন টিকিট! প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য শেনজেন ভিসার দাম সাধারণত ৮০-৯০ ইউরো (যা প্রায় ১০-১৫ হাজার টাকা)। ৬-১২ বছর বয়সী শিশুদের জন্য ৪০-৪৫ ইউরো। তবে এই শুধুমাত্র ভিসার আবেদন ফি। আসল খরচটা আসে ভিসা প্রসেসিং, মেডিকেল টেস্ট, এয়ার টিকেট এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে। সব মিলিয়ে আপনার ইউরোপ ভ্রমণের মোট খরচ ৮-১৫ লক্ষ টাকা হতে পারে। তাই শুধু ভিসার ফি দেখে ভাববেন না যে অল্প টাকায় হয়ে যাবে!
পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে যেতে কত টাকা লাগে?
পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো কেন এত জনপ্রিয়, জানেন? কারণ এখানে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলির চেয়ে অনেক কম খরচে ভ্রমণ করা যায়। পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, রোমানিয়া এবং বুলগেরিয়ার মতো দেশগুলোতে যেতে আপনার সাধারণত ৫-৮ লক্ষ টাকা খরচ হতে পারে। এই বাজেটেই আপনি বিমান টিকেট, ভিসা, থাকা-খাওয়া এবং বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান ঘুরে আসার খরচ ভালোভাবে সামলাতে পারবেন। আমার মনে হয়, যারা প্রথমবার ইউরোপ যাচ্ছেন এবং বাজেট নিয়ে কিছুটা চিন্তিত, তাদের জন্য পূর্ব ইউরোপই সেরা চয়েস।
ইউরোপ ভ্রমণের সেরা সময় কখন?
ইউরোপ ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন? তাহলে সঠিক সময় নির্বাচন করা খুবই জরুরি, কারণ এটি আপনার অভিজ্ঞতা এবং খরচের উপর বড় প্রভাব ফেলে। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ইউরোপ ভ্রমণের সেরা সময় হলো এপ্রিল-জুন (বসন্ত) এবং সেপ্টেম্বর-অক্টোবর (শরৎ)। এই সময়টাকে “শোল্ডার সিজন”ও বলা হয়।
কেন এই সময়টা সেরা?
- আবহাওয়া মনোরম: না খুব গরম, না খুব ঠান্ডা—আরামদায়ক তাপমাত্রা থাকে, যা ঘোরার জন্য একদম পারফেক্ট।
- পর্যটকদের ভিড় কম: গ্রীষ্মকালে (জুলাই-আগস্ট) পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় থাকে, কিন্তু বসন্ত বা শরৎকালে ভিড় অনেক কম থাকে, ফলে আপনি নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াতে পারবেন।
- হোটেল ও ফ্লাইটের দাম কম: পিক সিজনের তুলনায় এই সময়টাতে হোটেল এবং বিমান টিকেটের দাম তুলনামূলকভাবে কম থাকে, যা আপনার বাজেট নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে।
শেনজেন ভিসা দিয়ে কতগুলো দেশে যাওয়া যায়?
আর্টিকেলটার শুরুতে যেমনটা বলেছিলাম, শেনজেন ভিসা হলো ইউরোপের ২৭টি দেশে ঘোরার জন্য আপনার পাসপোর্ট! একবার এই ভিসা হাতে পেলে আপনি ৯০ দিন পর্যন্ত এই দেশগুলোতে ঘুরে বেড়াতে পারবেন। এর মধ্যে রয়েছে ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, স্পেন, পর্তুগাল, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড সহ ইউরোপের বেশিরভাগ জনপ্রিয় দেশ। ভাবুন তো, একটা মাত্র ভিসায় কতগুলো দেশ ঘোরার সুযোগ!
ইউরোপ ভিসার জন্য কি কি কাগজপত্র লাগে?
ইউরোপ ভিসার আবেদন করার সময় সঠিক কাগজপত্র প্রস্তুত রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সামান্য ভুলে আপনার আবেদন বাতিল হতে পারে। তাই আমি আপনাকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের একটি তালিকা দিচ্ছি, যা আপনার হাতের কাছে থাকলে প্রক্রিয়াটি সহজ হবে:
- ৬ মাস মেয়াদী পাসপোর্ট: আপনার পাসপোর্টের মেয়াদ যেন অন্তত ৬ মাস থাকে।
- পাসপোর্ট সাইজ ছবি: সম্প্রতি তোলা এবং ভিসার নির্দেশিকা অনুযায়ী ছবি।
- ভিসা আবেদন ফর্ম: সঠিকভাবে পূরণ করা এবং স্বাক্ষরিত ফর্ম।
- বিমান টিকেট বুকিং: রিটার্ন টিকেটসহ নিশ্চিত বিমান টিকেটের কপি।
- হোটেল বুকিং: আপনার পুরো ভ্রমণের জন্য হোটেল বা থাকার জায়গার নিশ্চিত বুকিং।
- ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট: আপনার আর্থিক সচ্ছলতার প্রমাণ। এটি খুবই জরুরি।
- ট্রাভেল ইনস্যুরেন্স: শেনজেন দেশগুলির জন্য প্রয়োজনীয় ট্র্যাভেল ইনস্যুরেন্স।
- চাকরি বা ব্যবসার প্রমাণপত্র: আপনি যদি চাকরিজীবী হন, তাহলে NOC (No Objection Certificate) এবং যদি ব্যবসায়ী হন, তাহলে ট্রেড লাইসেন্স ও অন্যান্য কাগজপত্র।
কোন দেশের ভিসা পাওয়া সহজ? ✅
অনেকের মনেই প্রশ্ন থাকে, বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের কোন দেশের ভিসা পাওয়া সহজ? সত্য বলতে কি, ভিসার সহজলভ্যতা নির্ভর করে আপনার আবেদন কতটা নির্ভুল এবং আপনার আর্থিক সচ্ছলতা কতটা শক্ত তার উপর। তবে কিছু দেশ আছে যেখানে ভিসা পাওয়ার হার তুলনামূলকভাবে বেশি দেখা যায়। আমার রিসার্চ অনুযায়ী, ফ্রান্স, পর্তুগাল, মাল্টা, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, হাঙ্গেরি, লিথুয়ানিয়া এবং লাটভিয়া – এই দেশগুলোর ভিসা বাংলাদেশ থেকে তুলনামূলকভাবে সহজে পাওয়া যেতে পারে। এর কারণ হতে পারে যে, এই দেশগুলোতে ভিসার আবেদনকারীর সংখ্যা অন্য দেশের তুলনায় কম থাকে বা তাদের অভিবাসন নীতি কিছুটা শিথিল।
ইউরোপে কাজের বেতন কত?
শুধুই কি ঘুরতে যাবেন? নাকি কাজ করে কিছুটা খরচ তুলতে চান? ইউরোপে কাজের বেতনের বিষয়টি দেশভেদে ভিন্ন হয়। আপনার দক্ষতা, কাজের ধরন এবং ভাষার দক্ষতার উপরও বেতন নির্ভর করে। একটি ধারণা দিতে গেলে:
| দেশ | আনুমানিক মাসিক বেতন (টাকা) |
| বুলগেরিয়া | সর্বনিম্ন ৬০,০০০ টাকা |
| পোল্যান্ড | ১,০৬,০০০ টাকা পর্যন্ত |
| রোমানিয়া | ৬০,০০০-১,০০,০০০ টাকা |
| হাঙ্গেরি | ৭০,০০০-১,০০,০০০ টাকা |
| জার্মানি | ২,১৪,০০০ টাকা পর্যন্ত |
এই বেতনগুলো সাধারণত প্রাথমিক স্তরের কাজের জন্য একটি গড় ধারণা। উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন কাজের জন্য বেতন আরও অনেক বেশি হতে পারে।
ইউরোপে ১ লাখ টাকায় কোন দেশে ঘুরা যায়?
আচ্ছা, আপনার বাজেট যদি খুবই টাইট হয়, ধরুন ১ থেকে ১.৫ লাখ টাকা, তাহলেও কি ইউরোপে ঘোরা সম্ভব? হ্যাঁ, একদম সম্ভব! তবে এর জন্য আপনাকে একটু বেশি বুদ্ধি খাটাতে হবে এবং খুব ভালোভাবে পরিকল্পনা করতে হবে। স্লোভাকিয়া, রোমানিয়া, পর্তুগাল, হাঙ্গেরি, বুলগেরিয়া, এস্তোনিয়া এবং ক্রোয়েশিয়ায় আপনি ১ লাখ থেকে ১.৫ লাখ টাকার মধ্যে ৪-৫ দিনের একটি ছোট ভ্রমণ পরিকল্পনা করতে পারেন। এর জন্য আপনাকে যা করতে হবে:
- আগে থেকে বুকিং: বিমান টিকেট এবং হোটেল বুকিং অনেক আগে থেকে করে ফেলুন, তাহলে সস্তায় পেয়ে যাবেন।
- কম খরচের এয়ারলাইন: Ryanair, Wizz Air-এর মতো বাজেট এয়ারলাইনগুলি ব্যবহার করুন।
- হস্টেল বা গেস্ট হাউস: থাকার জন্য হোটেল না খুঁজে হস্টেল বা গেস্ট হাউস বেছে নিন।
- নিজেই রান্না করুন: সম্ভব হলে কিছু বেলার খাবার নিজেই তৈরি করুন, রেস্টুরেন্টের খরচ বাঁচবে।
- পাবলিক ট্রান্সপোর্ট: স্থানীয় পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করুন, ট্যাক্সি বা প্রাইভেট কার এড়িয়ে চলুন।
কম খরচে যাওয়ার উপযুক্ত ইউরোপীয় দেশসমূহ
পোল্যান্ড
পোল্যান্ড হলো পূর্ব ইউরোপের একটি ঐতিহাসিক দেশ, যা তার মধ্যযুগীয় শহর, দুর্গ এবং সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্য পরিচিত। বাংলাদেশ থেকে পোল্যান্ড যেতে আপনার ৬-৮ লক্ষ টাকা খরচ হতে পারে। ক্রাকো, ওয়ারশো এবং গদানস্কের মতো শহরগুলো তাদের ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং প্রাণবন্ত সংস্কৃতির জন্য পরিচিত। শিক্ষার্থীদের জন্য এখানে পড়াশোনার খরচও তুলনামূলকভাবে কম।
হাঙ্গেরি
হাঙ্গেরি, বিশেষ করে এর রাজধানী বুদাপেস্ট, ইউরোপের সবচেয়ে সাশ্রয়ী শহরগুলির মধ্যে অন্যতম। এখানে যেতে প্রায় ৬-৭ লক্ষ টাকা খরচ হয়। দানিয়ুব নদীর তীরে অবস্থিত এই শহরটি তার ঐতিহাসিক ভবন, উষ্ণ স্নানাগার এবং প্রাণবন্ত নাইটলাইফের জন্য বিখ্যাত। পাবলিক ট্রান্সপোর্টের মাসিক পাস খুব কম খরচে পাওয়া যায়, যা আপনাকে শহরজুড়ে ঘুরে বেড়াতে সাহায্য করবে।
রোমানিয়া
দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের এই দেশটি তার প্রাচীন মন্দির, গীর্জা এবং বিশেষ করে ব্রান ক্যাসেলে ড্রাকুলার কিংবদন্তির জন্য বিখ্যাত। রোমানিয়া যেতে আপনার ৬-৭ লক্ষ টাকা লাগতে পারে এবং এখানে কাজের বেতনও ৬০,০০০ থেকে ১,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। রুমানিয়ার গ্রামাঞ্চল এবং কার্পাথিয়ান পর্বতমালা ভ্রমণপিপাসুদের জন্য এক দারুণ অভিজ্ঞতা।
পর্তুগাল
পর্তুগাল পশ্চিম ইউরোপের একটি দেশ হলেও, এর জীবনযাত্রার খরচ ফ্রান্স বা জার্মানির মতো দেশগুলির চেয়ে অনেক কম। লিসবন এবং পোর্টোর মতো শহরগুলি তাদের সুন্দর সমুদ্র সৈকত, ঐতিহাসিক স্থাপত্য এবং সুস্বাদু সামুদ্রিক খাবারের জন্য পরিচিত। মোটামুটি ভালো হোটেলে থাকার খরচ প্রায় ২,৫০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।
বুলগেরিয়া
বুলগেরিয়া হলো কৃষ্ণ সাগরের তীরবর্তী একটি দেশ, যা তার পাহাড়, সমুদ্র সৈকত এবং বন্ধুত্বপূর্ণ স্থানীয়দের জন্য বিখ্যাত। এখানে যেতে ৫-৭ লক্ষ টাকা খরচ হয়। দৈনিক খাবার খরচ প্রায় ৮০০ টাকা এবং থাকার খরচ ১,৮০০-২,০০০ টাকা হতে পারে। বুলগেরিয়া তার গোলাপ তেল এবং ঐতিহাসিক মঠগুলির জন্যও সুপরিচিত।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস!
ইউরোপ ভ্রমণের স্বপ্ন পূরণ করতে চান, কিন্তু বাজেট নিয়ে চিন্তিত? এখানে কিছু কাজের টিপস দেওয়া হলো, যা আপনার খরচ কমাতে সাহায্য করবে:
- আগে থেকে পরিকল্পনা করুন: ভ্রমণের অন্তত ৬ মাস আগে ফ্লাইট, হোটেল ও ভিসার বুকিং কনফার্ম করুন। শেষ মুহূর্তে বুকিং করলে খরচ অনেক বেড়ে যায়।
- শোল্ডার সিজনে ভ্রমণ: মে-সেপ্টেম্বর (পিক সিজন) এড়িয়ে এপ্রিল বা অক্টোবরে ভ্রমণ করলে খরচ কম হয়। এই সময়টাতে আবহাওয়াও মনোরম থাকে।
- পূর্ব ইউরোপ বেছে নিন: পশ্চিম ইউরোপের তুলনায় পূর্ব ইউরোপে খরচ অনেক কম। এখানকার দেশগুলো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর ঐতিহাসিক গুরুত্বে কোনো অংশে কম নয়।
- শেনজেন ভিসা নিন: একটি শেনজেন ভিসা আপনাকে ২৭টি দেশ ভ্রমণের সুবিধা দেবে। ফলে বারবার ভিসার আবেদন করার ঝামেলা এবং খরচ দুটোই বাঁচবে।
- বাজেট এয়ারলাইন ব্যবহার করুন: Ryanair, Wizz Air-এর মতো বাজেট এয়ারলাইনগুলো ইউরোপের ভেতরে সস্তায় ভ্রমণের জন্য দারুণ।
- পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করুন: স্থানীয় পাবলিক ট্রান্সপোর্ট যেমন বাস, ট্রেন বা ট্রাম ব্যবহার করুন। এটি ট্যাক্সি বা প্রাইভেট কারের চেয়ে অনেক সাশ্রয়ী।
- নিজের খাবার তৈরি করুন: যদি সম্ভব হয়, কিছু বেলার খাবার হোস্টেল বা অ্যাপার্টমেন্টে নিজেই তৈরি করে নিন। রেস্টুরেন্টের খরচ অনেকটাই কমে যাবে।
- ফ্রি ওয়াকিং ট্যুর: অনেক শহরে ফ্রি ওয়াকিং ট্যুর থাকে। এগুলোতে অংশ নিয়ে আপনি স্থানীয় সংস্কৃতি ও ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবেন, তাও বিনা পয়সায়।
উপসংহার
তাহলে দেখলেন তো, কম খরচে ইউরোপ ভ্রমণ করাটা কিন্তু আসলে অসম্ভব নয়! একটু বুদ্ধি খাটালে, সঠিক পরিকল্পনা করলে এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস মেনে চললে আপনিও বাংলাদেশ থেকে আপনার স্বপ্নের ইউরোপ ট্যুরটা সেরে ফেলতে পারবেন। পূর্ব ইউরোপের সাশ্রয়ী দেশগুলো থেকে শুরু করে সঠিক সময়ে ভ্রমণ, আগে থেকে বুকিং এই সব কিছুই আপনার বাজেটকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে।
এখন আর দেরি কেন? এখনই আপনার স্বপ্নের ইউরোপ ভ্রমণের পরিকল্পনা শুরু করে দিন! আপনার বাজেট, পছন্দ এবং ভ্রমণের সময় অনুযায়ী সেরা দেশগুলো বেছে নিন এবং ইউরোপের অপার সৌন্দর্য আবিষ্কারের জন্য প্রস্তুত হন। আপনার যদি আরও কোনো প্রশ্ন থাকে বা কোনো নির্দিষ্ট দেশ সম্পর্কে জানতে চান, তাহলে নিচে কমেন্ট করে আমাকে জানাতে ভুলবেন না! আপনার ইউরোপ যাত্রা শুভ হোক!
আপনার প্রশ্ন বা অভিজ্ঞতা নিচে কমেন্ট করে আমাদের সাথে শেয়ার করুন!
আমি একটি প্রাইভেট ভিসা প্রসেসিং কোম্পানিতে জব করি। পাশাপাশি এই ব্লগটিতে লেখালেখি করি। আমি ব্রাক ইউনিভার্সিটে থেকে এমবিএ করেছি।
