ইউরোপ ভ্রমণ সবসময়ই এক দারুণ অভিজ্ঞতা, আর সৌদি আরব থেকে যাওয়া এখন আরও সহজ হয়ে গেছে। বেশিরভাগ মানুষ যেমনটা আশা করে, বিমান ভ্রমণই সবচেয়ে জনপ্রিয় ও ঝামেলাহীন উপায়। তবে বাজেট, সময় আর অভিজ্ঞতার ধরণ অনুযায়ী আরও কিছু বিকল্প হাতে আছে।
সরাসরি ফ্লাইট – ঝামেলা ছাড়াই ইউরোপ
যদি আমার মতো আপনি-ও সরাসরি পৌঁছে যেতে চান, তাহলে সৌদিয়া এয়ারলাইন্স হবে প্রথম নাম। ২০২৫ সালে তারা একের পর এক নতুন রুট চালু করেছে।
রিয়াদ থেকে এখন সহজেই যেতে পারবেন:
- ভিয়েনা (অস্ট্রিয়া)
- এথেন্স (গ্রিস)
- ভেনিস (ইতালি)
- নিস (ফ্রান্স)
- মালাগা (স্পেন)
জেদ্দা থেকেও বেশ কিছু নতুন বিকল্প আছে:
- লারনাকা (সাইপ্রাস)
- হেরাক্লিওন (গ্রিস)
এর বাইরে, লন্ডন, ফ্রাঙ্কফুর্ট, প্যারিস, রোম, মিলান, আমস্টারডাম—এসব শহরে তো আগেই সরাসরি ফ্লাইট ছিলই।
বাজেট ভ্রমণের অপশন
যদি টিকিটের দাম নিয়ে চিন্তা থাকে, আমার টিপস হলো—লো-কস্ট এয়ারলাইনস।
- ফ্লাইনাস: সৌদি আরবের নিজের বাজেট এয়ারলাইন, প্রায় ৮৮টা গন্তব্যে ফ্লাইট চালায়। দাম তুলনামূলকভাবে অনেক সাশ্রয়ী।
- ইউরোউইংস: জার্মানির এই এয়ারলাইন মাঝে মাঝে একদম অবিশ্বাস্য অফার দেয়—প্রায় ১২০ ইউরো থেকে টিকিট শুরু হতে পারে।
কানেকটিং ফ্লাইট – একটু বেশি সময়, কিন্তু বেশি বিকল্প
সবসময় সরাসরি ফ্লাইট পাওয়া যায় না বা সস্তায় মেলে না। তখন কানেকটিং ফ্লাইট কাজে আসে।
- ইস্তাম্বুল হয়ে তুর্কি এয়ারলাইন্স: ইউরোপের প্রায় সব বড় শহরে কানেকশন পাওয়া যায়।
- দুবাই হয়ে এমিরেটস: যারা প্রিমিয়াম সার্ভিস পছন্দ করেন, তাদের জন্য এটা দুর্দান্ত।
ভিসার ঝামেলা – এখনকার অবস্থা
এখনো ইউরোপে যেতে হলে শেনজেন ভিসা নিতে হয়। এর মাধ্যমে আপনি ৯০ দিন পর্যন্ত থাকতে পারবেন এবং ভিসা ফি সাধারণত €৮০।
তবে ভালো খবর হলো—সৌদি নাগরিকরা এখন অনেক সহজেই ৫ বছরের মাল্টিপল-এন্ট্রি শেনজেন ভিসা পাচ্ছেন। মানে একবার নিলে কয়েক বছর ইউরোপ যাওয়া নিয়ে আর নতুন করে চিন্তা করতে হবে না।
আর হ্যাঁ, অনেকেই বলে থাকেন যে শিগগিরই ভিসা-মুক্ত ভ্রমণ চালু হবে। আলোচনা চলছে ঠিকই, তবে এটা এখনো নিশ্চিত হয়নি।
খরচ ও সময়
টিকিটের দাম সবসময় ওঠানামা করে, তবে সাধারণত:
- রিয়াদ থেকে ফ্রাঙ্কফুর্টের সরাসরি ফ্লাইট $২০০–৬০০ এর মধ্যে পাওয়া যায়।
- বাজেট এয়ারলাইন্স ধরলে প্রায় $১৮০ থেকে শুরু করা সম্ভব।
- সবচেয়ে কম সময় লাগতে পারে ১৩ ঘণ্টা ৩০ মিনিটের মতো, যদি কানেকশন ভালোভাবে মিলে যায়।
ওভারল্যান্ড – রোমাঞ্চকর কিন্তু জটিল
সৌদি আরব থেকে ইউরোপে গাড়িতে যাওয়া সম্ভব, কিন্তু বলতেই হবে—এটা একদমই সহজ না। প্রায় ৫,২০০ কিলোমিটার পথ, খরচ পড়তে পারে $৮৫০-এর বেশি, আর সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো নিরাপত্তা। সিরিয়ার মতো জায়গা পার হতে হয় বলে ঝুঁকি থাকে প্রচুর।
কিছু পরিবহন কোম্পানি ট্রাক ও কার্গো রুট অফার করে, তবে ভ্রমণকারীদের জন্য সেটা ব্যবহারিক নয়।
আমার পরামর্শ
যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, আমি বলব:
- সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের নতুন সরাসরি রুট – নির্ভরযোগ্য, দ্রুত আর সুবিধাজনক।
- তুর্কি এয়ারলাইন্স ইস্তাম্বুল হয়ে – বাজেট আর ফ্লেক্সিবল ভ্রমণের জন্য দারুণ।
- ফ্লাইনাস – যারা খরচ বাঁচাতে চান তাদের জন্য বেস্ট।
ভবিষ্যতে যদি সত্যিই ভিসা-মুক্ত ভ্রমণ শুরু হয়, তাহলে সৌদি নাগরিকদের জন্য ইউরোপ ঘুরে আসা হবে আরও সহজ আর উপভোগ্য।
আমি একটি প্রাইভেট ভিসা প্রসেসিং কোম্পানিতে জব করি। পাশাপাশি এই ব্লগটিতে লেখালেখি করি। আমি ব্রাক ইউনিভার্সিটে থেকে এমবিএ করেছি।